বিজ্ঞানীরা এমন এক ‘বিস্ময়কারভাবে বিশুদ্ধ’ সিলিকন তৈরির দাবি করেছেন, যে যুগান্তকারী উপাদান দিয়ে অবশেষে একটি কার্যকর কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরির স্বপ্ন বাস্তবে রূপান্তরের সম্ভাবনা জেগেছে।
এই বিশুদ্ধ সিলিকন বানাতে নতুন এক কৌশল অবলম্বন করেছেন বিজ্ঞানীরা, যার ফলাফল বড় আকারের কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরির একেবারে নিখুঁত উপাদান বলে দাবি তাদের।
এইসব কোয়ান্টাম কম্পিউটার পরবর্তীতে ‘মানবজাতির জন্য বড় পরিবর্তন’ বয়ে আনবে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেন্ডেন্ট। এমনকি হালের প্রযুক্তিতে যেসব কাজ করতে কয়েক শতাব্দি লেগে যেত, সেগুলোও নিমিষেই সমাধান করার সম্ভাবনা আছে এতে।
এইসব কম্পিউটার তৈরির ক্ষেত্রে, ‘ফ্র্যাজাইল কোয়ান্টাম কোহেরেন্স’ নামে পরিচিত এক সমস্যা কাটিয়ে ওঠার বেলাতেও সহায়ক হিসেবে কাজ করবে যুগান্তকারী উপাদানটি। এর সঙ্গে যোগসূত্র রয়েছে কোয়ান্টাম কম্পিউটারের বিভিন্ন ত্রুটি খুব দ্রুত জমা করে ফেলার ঝুঁকির সঙ্গে। এর ফলে কোয়ান্টাম কম্পিউটার শিগগিরই নির্ভরশীলতা হারাতো।
‘কোয়ান্টাম বিট’ বা ‘কিউবিট’ হল কোয়ান্টাম কম্পিউটারের মূল চালিকাশক্তি, ঠিক যেমন গতানুগতিক কম্পিউটারের বেলায় ‘বিট’। তবে, এগুলো পরিবেশের ছোটখাটো পরিবর্তন থেকেও প্রভাবিত হতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে তাপমাত্রার তারতম্যের বিষয়টিও। উদাহরণ হিসেবে ধরা যায়, বর্তমানে যেসব কোয়ান্টাম কম্পিউটার আছে সেগুলোকে ফ্রিজে রেখে দিলে সেগুলো পরম শূণ্য তাপমাত্রার কাছাকাছি অবস্থায় রাখলেও এগুলো সেকেন্ডের কেবল এক ভগ্নাংশ সময় ঠিকঠাক ফলাফল দেয়।
নতুন এ উপাদান সেইসব সমস্যা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করতে পারে। কারণ, এতে ব্যবহার করা হয়েছে ফসফরাস পরমাণুর তৈরি কিউবিট, যা পরে বিশুদ্ধ সিলিকনের স্ফটিকের মধ্যে রেখে আরও শক্তিশালী বানানো হয়েছে।
এই প্রক্রিয়ায় একটি সিলিকন চিপে বিশুদ্ধ সিলিকনের রশ্মি ছোড়া হয়, যার মাধ্যমে অপ্রয়োজনীয় পরমাণু সরিয়ে খাঁটি সিলিকন বসানো হয়। এর মাধ্যমে চিপের মধ্যে অপ্রয়োজনীয় পরমাণুর পরিমাণ সাড়ে চার শতাংশ থেকে কমে এসেছে পাঁচ হাজার ভাগের এক ভাগে।
“দারুণ খবর হল– সিলিকন এ স্তরে বিশুদ্ধ হওয়ায় আমরা এখন এমন একটি আদর্শ মেশিন বা আয়ন ইমপ্লান্টার ব্যবহার করতে পারব, যা আপনি যে কোনো সেমিকন্ডাক্টর ফ্যাব্রিকেশন ল্যাবে খুঁজে পাবেন, তাও আমাদের নকশা করা সুনির্দিষ্ট কনফিগারেশনের সঙ্গে মিল রেখে,” বলেছেন ‘ইউনিভার্সিটি অফ মেলবোর্ন’-এর অধ্যাপক ডেভিড জেমিসন, যিনি এ প্রকল্পের সহ-তত্ত্বাবধায়ক হিসেবেও কাজ করেছেন।
প্রকল্পটির সিংহভাগ কাজ হয়েছে ‘ইউনিভার্সিটি অফ ম্যানচেস্টার’-এ, যার ‘অ্যাডভান্সড ইলেকট্রনিক ম্যাটিরিয়ালস’ বিভাগের অধ্যাপক রিচার্ড কারির দাবি, এ যুগান্তকারী আবিষ্কার একটি কার্যকর কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরির কাজের গতি ‘ব্যাপক’ বাড়িয়ে দিতে পারে। এতে করে যেসব লক্ষ্যমাত্রা পূরণে আনুমানিক ১০ বছর সময় লেগে যেত, সেগুলোও এখন মাত্র পাঁচ বছর বা এর চেয়ে কম সময়ে করা যাবে।
গবেষকরা এমন বেশ কিছু সম্ভাবনার কথা বলেছেন, যেগুলো ব্যবহারযোগ্য কোয়ান্টাম কম্পিউটারের মাধ্যমে পূরণ করা সম্ভব। যেমন— কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, যোগাযোগ, নতুন ওষুধ তৈরি ও শক্তি ব্যবহারের নতুন উপায়।
এজন্য গবেষকদের অবশ্যই প্রমাণ দেখাতে হবে যে, বিশুদ্ধ সিলিকন ব্যবহার করে বহু কিউবিটওয়ালা এমন একটি কম্পিউটার বানানো সম্ভব, যেখানে সকল কিউবিট একই সময়ে কাজ করে।
মন্তব্য করুন