din9808
২৯ জুন ২০২২, ১১:৪০ পূর্বাহ্ন
অনলাইন সংস্করণ

যেসব পশু দ্বারা কুরবানি করা যাবে ও যাবে না

কুরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। সামর্থ্যবান পুরুষ মহিলার ওপর কুরবানি ওয়াজিব। এটি ইসলামের মৌলিক ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত।  আদম (আ.) থেকে শুরু করে সব নবীর যুগেই কুরবানি পালিত হয়েছে।

এটি ‘শাআইরে ইসলাম’ তথা ইসলামের প্রতীকী বিধানাবলির অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং এর মাধ্যমে ‘শাআইরে ইসলামের’ বহিঃপ্রকাশ ঘটে।

এছাড়া গরিব-দুঃখী ও পাড়া-প্রতিবেশীর আপ্যায়নের ব্যবস্থা হয়। আল্লাহ ও তার রাসুলের শর্তহীন আনুগত্য, ত্যাগ ও বিসর্জনের শিক্ষাও আছে কুরবানিতে।

নবীজিকে আল্লাহতায়ালা নির্দেশ দিয়েছেন- আপনি আপনার রবের উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ুন এবং কুরবানি আদায় করুন।  (সুরা কাওসার:২)

অন্য আয়াতে এসেছে- (হে রাসুল!) আপনি বলুন, আমার নামাজ, আমার কুরবানি, আমার জীবন, আমার মরণ রাব্বুল আলামীনের জন্য উৎসর্গিত। (সুরা আনআম: ১৬২)

জীবনঘনিষ্ঠ ধর্ম ইসলামে সকল বিধানের স্বরূপ, আদায়ের পদ্ধতি ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিস্তারিত বলা হয়েছে।

তাই কুরবানি আদায়ের সকল বিধানও আমরা পেয়ে যাই কোরআন ও হাদিসের বর্ণনায়। আসন্ন কোরবানির জরুরি কিছু বিধান পাঠকদের জ্ঞাতার্থে উল্লেখ করা হলো-

কুরবানির পশু কেমন হবে?

কুরবানি দিতে হবে শরিয়ত যে ধরনের পশু পছন্দ করে। যেমন- উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা ইত্যাদি দিয়ে। এ ধরনের পশুকে কুরআনের ভাষায় বলা হয় ‘বাহিমাতুল আনআম অর্থাৎ অহিংস্র গৃহপালিত চতুষ্পদ জন্তু।’

এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য কুরবানির নিয়ম নির্ধারণ করে দিয়েছি। জীবনোপকরণ স্বরূপ তাদের যেসব ‘বাহিমাতুল আনআম’ দিয়েছি সেগুলোর ওপর তারা যেন আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে।’ (সুরা হজ, আয়াত ৩৪।)

কুরবানির পশু কেমন হবে এ সম্পর্কে হজরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা চেষ্টা করবে কুরবানির জন্য নির্দিষ্ট বয়সের পশু নির্বাচন করতে। যদি না পাও তাহলে ছয় মাসের দুম্বা কোরবানি করতে পার। (মুসলিম।)

ফকিহরা বলেছেন, উটের বয়স পাঁচ বছর, গরু বা মহিষ দুই বছর, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা এক বছরের হওয়া শর্ত। বয়স কম; কিন্তু দেখতে হৃষ্টপুষ্ট এমন পশু দিয়ে কোরবানি করা জায়েজ হওয়ার পক্ষে বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন।

রাসুল (সা.) উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা ছাড়া অন্য কোনো পশু কুরবানি করেননি কিংবা অনুমোদনও করেননি। তাই এসব পশু দিয়েই কুরবানি করা সুন্নাত।

শরিয়তের পরামর্শ হল, হৃষ্টপুষ্ট, বেশি গোশত, নিখুঁত এবং দেখতে সুন্দর পশু কুরবানি করা। কুরবানির পশু সব ধরনের দোষ-ত্রুটিমুক্ত হওয়া চাই।

বারা ইবনে আজেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, চার ধরনের পশু দিয়ে কোরবানি করা জায়েজ নয়। অন্ধ, রোগা, পঙ্গু এবং আহত।

নাসায়ির বর্ণনায় ‘আহত’ শব্দের জায়গায় ‘পাগল’ বলা হয়েছে। (সুনানে নাসায়ি।) শিং ভাঙা, কান কাটা, লেজ কাটা, ওলান কাটা, লিঙ্গ কাটা ইত্যাদি ধরনের পশু দিয়ে কুরবানি করাকে মাকরুহ বলেছেন ফকিহরা।

ভেড়া, দুম্বা, ছাগল এসব পশু একজন কুরবানি করতে পারবেন। উট, গরু, মহিষ সর্বোচ্চ সাতজন কোরবানি করতে পারবেন।

হজরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা হুদাইবিয়ায় রাসুল (সা.) এর উপস্থিতিতে গরুর ও উট সাত ভাগের কুরবানি করেছি। (ইবনে মাজাহ।) পশু জবাই করার সময় পশুকে খুব আদর করে কষ্ট না দিয়ে জবাই করার নির্দেশ দিয়েছেন রাসুল (সা.)।

হাদিসের আলোকে কোরবানির পশু হৃষ্টপুষ্ট হওয়া উত্তম। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হৃষ্টপুষ্ট, নিখুঁত ও উত্তম পশু কুরবানি করতেন এবং খুঁতবিশিষ্ট পশু কুরবানি করতে নিষেধ করেছেন।

খুঁতবিশিষ্ট যে সব প্রাণিতে কুরবানি বৈধ নয়- সুন্নাহর আলোকে ইসলামী স্কলারগণ তা নির্ধারণ করেছেন।

যেমন- যে পশু তিন পায়ে চলে, এক পা মাটিতে রাখতে পারে না বা ভর করতে পারে না এমন খোঁড়া পশুর কুরবানি জায়েজ নয়।

এমন রুগ্ন দুর্বল পশু, যা জবাইয়ের স্থান পর্যন্ত হেঁটে যেতে পারে না তা দ্বারাও কুরবানি করা জায়েজ নয়।

যে পশুর একটি দাঁতও নেই বা এত বেশি দাঁত পড়ে গেছে যে, ঘাস বা খাদ্য চিবাতে পারে না- এমন পশু দ্বারাও কুরবানি করা জায়েজ নয়।

যে পশুর শিং একেবারে গোড়া থেকে ভেঙ্গে গেছে, যে কারণে মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সে পশুও কুরবানি জায়েজ নয়।  তবে যে পশুর অর্ধেক শিং বা কিছু শিং ফেটে বা ভেঙ্গে গেছে বা শিং একেবারে উঠেইনি সে পশু কুরবানি করা জায়েজ আছে।

যে পশুর লেজ বা কোনো কান অর্ধেক বা তারও বেশি কাটা সে পশুর কুরবানি জায়েজ নয়। আর যদি অর্ধেকের বেশি থাকে তাহলে তার কুরবানি জায়েজ আছে। তবে জন্মগতভাবেই যদি কান ছোট হয় তাহলে অসুবিধা নেই।

যে পশুর দুটি চোখই অন্ধ বা এক চোখ পুরো নষ্ট সে পশু কুরবানি করা জায়েজ নয়।

গর্ভবতী পশু কুরবানি করা জায়েজ। জবাইয়ের পর যদি বাচ্চা জীবিত পাওয়া যায় তাহলে সেটাও জবাই করতে হবে। তবে প্রসবের সময় আসন্ন হলে সে পশু কুরবানি করা মাকরূহ।

কুরবানির নিয়তে ভালো পশু কেনার পর যদি তাতে এমন কোনো দোষ দেখা দেয় যে কারণে কুরবানি জায়েজ হয় না- তাহলে ওই পশুর কুরবানি সহীহ হবে না। এর স্থলে আরেকটি পশু কুরবানি করতে হবে। তবে ক্রেতা গরিব হলে ত্রুটিযুক্ত পশু দ্বারাই কুরবানি করতে পারবেন।

নিশ্চিত অবগতি না থাকলে যদি বিক্রেতা কুরবানির পশুর বয়স পূর্ণ হয়েছে বলে স্বীকার করে আর পশুর শরীরের অবস্থা দেখেও তাই মনে হয় তাহলে বিক্রেতার কথার ওপর নির্ভর করে পশু কেনা এবং তা দ্বারা কুরবানি করা যাবে।

Facebook Comments Box

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

শ্রীনগর পদ্মা নদীতে গোসল করতে গিয়ে যুবকের মৃত্যু

শ্রীনগরে বস্ত্র ব্যবসায়ীর বাড়িতে সন্ত্রাসী হামলা, ইউপি সদস্যসহ গ্রেপ্তার ১০

বৈশাখের প্রথম প্রহরে শ্রীনগরে বর্ষবরণ ও আনন্দ শোভাযাত্রা

শ্রীনগরে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে অটোচালক আহত

শ্রীনগরে অটোরিকশা ছিনতাইকালে গণপিটুনিতে এক ছিনতাইকারী নিহত, আহত দুই

ঈদের দিন থেকে টেলিটকের ডাটা প্যাকেজের দাম কমছে

চীন থেকে ২.১ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ-ঋণ ও অনুদানের প্রতিশ্রুতি পেয়েছে বাংলাদেশ

চীনে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা

শ্রীনগরে বিদেশী অস্ত্র ও ম্যাগাজিনসহ যুবক গ্রেফতার

শ্রীনগরে শিশু ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে দিল জনতা

১০

দীর্ঘ ৭মাস পর কবর থেকে তোলা হল বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত শহীদ আলামিনের লাশ

১১

শ্রীনগরে তরুণীর রহস্যজনক মৃত্যু

১২

শ্রীনগরে পুত্রবধূর পরকীয়া প্রেমিকের কান কামড়ে ছিড়ে নিল শ্বশুর

১৩

শ্রীনগরে ছিনতাইকরে পালানোর সময় জনতার হাতে ৩ ছিনতাইকারী আটক

১৪

শ্রীনগরে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে বিএনপি’র মানববন্ধন

১৫

শ্রীনগরে কবর খুঁড়ে আবারো কঙ্কাল চুরি

১৬

পদত্যাগ করলেন উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম

১৭

শ্রীনগরে দোকানের ভিতর থেকে ব্যবসায়ীর গলিত লাশ উদ্ধার

১৮

শ্রীনগরে কবর খুঁড়ে কঙ্কাল চুরি

১৯

বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অতি চমৎকার: প্রধান উপদেষ্টা

২০